রমজান মাসে কোন কাজ গুলো করা উচিৎ?
রমজান মাসে কোন কাজ গুলো করা উচিৎ..?
মহান আল্লাহ বান্দাদের তার ভালোবাসা ও সান্নিধ্য দানের জন্যই রমজান মাস দান করেন। এ মাসের রোজা শুধু আল্লাহর জন্য আর আল্লাহ নিজেই রোজার প্রতিদান অথবা আল্লাহ নিজ হাতে রোজার প্রতিদান দেবেন। রোজার মাধ্যমে প্রতিদান লাভের জন্য রোজাকে নিখুঁত করতে হবে। প্রত্যেক ইবাদতকেই বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিক থেকে সুন্দর ও নিখুঁত করতে হয়, তাহলেই তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
এ মাসে আল্লাহর দরবারে মাগফেরাত কামনা করলে, গরিব-দুঃখীদের প্রতি দান-সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, নিজে সব ধরনের খারাপ কাজ পরিহার করলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-ইস্তেগফার করলে মহান আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন। আরো জানুন....!
আসুন আজকে আমরা জেনে নিবো এই রমজান মাসে কোন কাজ গুলো করা উচিৎ..?
কোরআন মজিদ তিলাওয়াত : এ মাস কোরআন অবতরণের মাস। রাসুলুল্লাহ (সা.) জিবরিল (আ.)-এর সঙ্গে রমজানের প্রত্যেক রাতে কোরআন মজিদ দাওর করতেন (একে অন্যকে শোনাতেন)
দান করা : দান-সদকা সর্বাবস্থায়ই উৎকৃষ্ট আমল, কিন্তু রমজানে এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুনিয়ার সব মানুষের চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে তাঁর দানের হাত আরো প্রসারিত হতো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০২)
তারাবি : রমজানের রাতের বিশেষ আমল হলো কিয়ামে রমজান তথা তারাবি। এ মাসের অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাত লাভ করার জন্য এবং প্রতিশ্রুত সওয়াব ও পুরস্কার পাওয়ার জন্য তারাবি নামাজের প্রভাব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় তারাবির সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (বুখারি)
নফল ইবাদত : এ মাসে শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে। এই সুযোগে বেশি পরিমাণে নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। অন্তত বিভিন্ন সময়ের নফল নামাজগুলো আদায় করা যেমন—ইশরাক, চাশত, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি।
ভালো কাজ বেশি বেশি করা : এই মাসে একটি ভালো কাজের বিনিময়ে অনেক নেকি অর্জন করা সম্ভব। কাজেই প্রত্যেক মুমিনের উচিত যথাসম্ভব ভালো কাজ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এই মাসের প্রতি রাতে একজন ঘোষণাকারী এই বলে আহ্বান করতে থাকে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী, তুমি আরো অগ্রসর হও। হে অসৎ কাজের পথিক, তুমি অন্যায় পথে চলা বন্ধ করো। তুমি কি জানো, এই মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন? (তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৪)
দোয়া করা : এ মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের মাস। তাই বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার শরণাপন্ন হয়ে কান্নাকাটি করে দোয়া করা একান্ত কাম্য।
মাগফিরাত কামনা করা : যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ ক্ষমা করাতে পারল না, তার ওপর জিবরিল (আ.) ও রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। তাই জীবনের কৃত গুনাহের কথা স্মরণ করে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করা, বিশেষ করে ইফতার ও তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহ তাআলার দরবারে ক্ষমা চাওয়া এবং দোয়া করা উচিত।
ইতিকাফ : শেষ দশকের মাসনুন ইতিকাফ অত্যন্ত ফজিলতের আমল। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০২১)
শবেকদর অন্বেষণ : ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করে সহস্র রজনী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম রাত লাইলাতুল কদর তালাশ করা কর্তব্য। এই রাতের গুরুত্ব বোঝাতে পবিত্র কোরআনে পৃথক একটি সুরা নাজিল করা হয়েছে। সামর্থ্য থাকলে ওমরাহ পালন করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ মাসে একটি ওমরাহ পালন হজ আদায়ের সমতুল্য। (বুখারি, হাদিস : ১৮ )
ইফতার করা : রমজান মাসে ফজিলতপূর্ণ কয়েকটি আমলের মধ্যে একটি আমল হলো দ্রুত ইফতার করা, বিলম্ব না করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন ইফতারের সময় খেজুর দিয়ে ইফতার করে। আর খেজুর না পেলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭)
অন্যকে ইফতার করানো : রোজাদারকে ইফতার করানো বিরাট সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার রোজার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। কিন্তু তাদের উভয়ের সওয়াব থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৪৬)
ফিতরা দেওয়া : রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণে ফিতরা দেওয়া আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাজের আগে ফিতরা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৫০৩)