পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা.!

 পানি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা.!

গরমকালে গরম পানি পানের কথা শুনলে ‘মুরুব্বি য়ুহু য়ুহু’ করে উঠতে পারেন! তবে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গরম পানি গ্রহণে মিলতে পারে নানান উপকারিতা।



‘জার্নাল অফ ফুড সায়েন্স’য়ে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট. থমাস স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ের করা গবেষণার বরাত দিয়ে হেল্থলাইন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, যে কোনো গরম পানীয় পানের ক্ষেত্রে সহনীয় সর্বোৎকৃষ্ট মাত্রা হল ৫৪ থেকে ৭১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট বা ১৩০ থেকে ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

তারমানে হল কুসুম গরম পানি। আর উপকারিতা বাড়াতে সাথে লেবুর রস মেশালে মিলবে ভিটামিন সি।
এছাড়াও গরম পানি পানের নানান ভালো দিক রয়েছে।

নাক বন্ধের সমস্যা দূর হওয়া: এক কাপ গরম পানি পানের সময়ে যে বাষ্প নাকে প্রবেশ করে সেটা বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে। সায়নাস, গলাসহ এসব জায়গা শ্লেষ্মা জমে। গরম পানি এসব জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় আরাম দেয়; শ্লেষ্মা গলাতে সাহায্য করে। আরও পড়ুন..!

যুক্তরাষ্ট্রের কার্ডিফ স্কুল অফ বায়োসান্সেস’য়ের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, গরম পানীয় যেমন- চা পানে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় নাক বন্ধ হওয়া, গলা খুসখুস করা ও ক্লান্তিভাব কাটাতে সাহায্য করে। সাধারণত তাপমাত্রার চাইতে গরম পানীয় এক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।



হজমে সহায়তা: পানি হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। আবর্জনা বয়ে নিয়ে নিষ্কাষণে ভূমিকা রাখে।

অনেকে মনে করেন এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি পানে হজমের কার্যকারিতা আরও বাড়ে।

২০১৬ সালে প্রকাশিত তুরষ্কের ‘দিয়ারবাকির ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ হসপিটাল’য়ের করা গবেষণায় দাবি করা হয়, অস্ত্রোপচারের পর অন্ত্রের নড়াচড়া ও গ্যাস নির্গত করার ব্যাপারে সুবিধাজনক প্রভাব রাখে কুসুম গরম পানি।

কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব: গরম কিংবা ঠাণ্ডা- পর্যাপ্ত পানি পান না করলে স্নায়ুতন্ত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। ফলে মস্তিষ্ক ও মেজাজের ওঠানামা দেখা দেয়।

যুক্তরাজ্যের ‘সোয়ানজি ইউনিভার্সিটি’র গবেষণায় বলা হয়, পানি পানের মাধ্যমে কেন্দ্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখা যায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে: এ কথা সবারই জানা, দেহে তরলের অভাবে মল শক্ত হয়ে যায়। পর্যাপ্ত তরল পান, বিশেষ করে কুসুম গরম পানি পান অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।


আর্দ্র থাকতে: সাধারণভাবে ধারণা হল- গরমে বা শীতে আর্দ্র থাকতে যে কোনো তাপমাত্রার পানি পান করা উপকারী।

আর্দ্র থাকতে: সাধারণভাবে ধারণা হল- গরমে বা শীতে আর্দ্র থাকতে যে কোনো তাপমাত্রার পানি পান করা উপকারী।

তবে ইরানের ‘উর্মিয়া ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সায়েন্সেস’য়ের গবেষণায় বলা হয়, কুসুম গরম পানি পানে দেহ আর্দ্র হয় বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি ইন্সটিটিউট অফ মেডিসিন’ সাধারণভাবে প্রত্যেক নারীর জন্য ২.৩ লিটার এবং পুরুষদের জন্য ৩.৩ দৈনিক পানি পানের নির্দেশনা দেয়।

শীতের কাঁপুনি ঠেকাতে: ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি’র ফ্যাকাল্টি অফ হেল্থ সায়েন্সেস’য়ের করা গবেষণা থেকে জানা যায়, দেহে যখন শীতের কারণে কাঁপুনি দেখা দেয় তখন গরম তরল পান সেটা কাটাতে সাহায্য করে। আর এ জন্য তরলের তাপমাত্রা ৫২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেটের মধ্যে থাকতে হবে।

রক্ত প্রবাহের উন্নতি: স্বাস্থ্য রক্ত প্রবাহ রক্তচাপসহ হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে।

হেল্থলাইন ডটকম’য়ে জানানো হয়- কুসুম গরম পানির দিয়ে গোসল করলে রক্ত প্রবাহের নানান অঙ্গ- ধমনী, শিরা, উপশিরা- স্ফিত হয় এবং বেশি রক্ত প্রবাহে সহায়তা করে সারা শরীরে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।  আরও পড়ুন..!

গরম পানি পানেও একই রকম উপকারিতা মেলে।



মানসিক চাপ কমাতে পারে: পানি পান যেহেতু কেন্দ্রিয় স্নায়ু তন্ত্রের উন্নতিতে সাহায্য করে সেহেতু মানসিক চাপও কমাতেও ভূমিকা রাখে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত ফ্রান্স ও ‍যুক্তরাষ্ট্রের করা যৌথ গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়- অপর্যাপ্ত পানি পানের কারণে মেজাজ ঠাণ্ডা রাখা যায় না, তৃপ্তি বোধ জাগে না এবং ইতিবাচক অনুভূতি কাজ করে না।

দেহের বিষাক্ততা দূর করতে: জাপানের ‘সানটোরি গ্লোবাল ইনোভেইশন সেন্টার লি.’য়ের করা গবেষণায় বলা হয়, বেশি বেশি পানি পানে বৃক্ক রক্ষা পায়। কারণ দেহের বর্জ পানিতে মিশ্রিত হয়ে বৃক্কের কাজকে সহজ করে দেয়।

গলা দিয়ে খাবার নামাতে: খাবার গিলতে গেল গলায় ঠেকার পরিস্থিতিকে বলা হয় ‘আকালেইজিয়া’। খাদ্যনালীতে খাবার আটকে থাকার এই সমস্যা দূর করতে পারে কুসুম গরম পানি।

চীনের ‘পিকিং ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজ হসপিটাল’য়ের গ্যাস্ট্রোইন্টারোলজি বিভাগের করা গবেষণার ফলাফল বলে, ‘আকালেইজিয়া’র সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা কুসুম গরম পানি পানে উপকার পান। পাশাপাশি হজমেও স্বস্তি নিয়ে আসে।

আসুন এখন জেনে নিবো পানি খাওয়ার অপকারিতা গুলো..!

  • বেশি গরম পানি পানে খাদ্যনালীর কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জিহ্বা, কণ্ঠ ও খাদ্য নালী পুড়ে যায়। ফলে খাবার খেতে সমস্যা হয়। তাই গরম তরল পানে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়।


  • যদিও কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে দেহের নানান প্রদাহ দূর হতে সাহায্য করে।
  • তবে ভারতীয় রূপবিশেষজ্ঞ শেহনাজ হুসাইন এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে রেডিফ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “অতিরিক্ত তাপ ত্বকের ক্ষতি করে, খসখসেভাব আনে, চুলের আর্দ্রতা শুষে নিয়ে রুক্ষ করে দেয় এবং আগা ফাটার সমস্যা দেখা দেয়।”
  • এছাড়া মাথার ত্বক শুষ্ক করে খুশকির মাত্রা বাড়াতে পারে। আরও পড়ুন..!
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url